আপনারা জানেন যে, শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব একটি অপরটির সাথে গভীরভাবে জড়িয়ে আছে। প্রতিটি সৃজনশীল মানুষই চায় একটি বাসযোগ্য সুন্দর পৃথিবী।সাড়ে চৌদ্দ শত বছর পূর্বে আমাদের প্রিয় নবী স. যে বার্তা বা ওহী নিয়ে এসেছিলেন এবং সেই বার্তা বা ওহী নবী করিম স. আমাদেরকে দিয়ে গেছেন তা হল ইলমে ওহী । এই ইলমে ওহী [বার্তা] বোঝার জন্য বা বুঝানোর জন্য আরবি ভাষা জানা প্রয়োজন। আজ আমরা অনেক ভুলের মধ্যে আছি। ইংরেজি বলে “ Education is the backbone of a nation” অর্থাৎ শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড। বাক্যটি অপূর্ণ হয়ে গেছে। সম্মানিত অভিভাবক , সত্যিকার অর্থে বাক্যটি হওয়া উচিৎ ছিল “ The Quranic education is the backbone of a nation” অর্থাৎ ‘কুরআনের শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড’। ব্যবসায় নয়, সেবার মনোভাব নিয়ে আমরা সমাজে প্রকৃত শিক্ষার প্রসার ঘটাতে চাই। তাই প্রতিটি মুসলিম অভিভাবকের উচিৎ আপনার ছোট্র সোনামনিকে হাতে খড়ি থেকে শুরু করে শিক্ষার শেষ প্রর্যন্ত যেন হয় ইসলামী ও আধুনিক শিক্ষার সমন্বয়ে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বিজ্ঞানের উৎকর্ষতার যুগে, প্রযুক্তির কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে দেশ, জাতি ও বিশ্বকে নেতৃত্ব দেয়ার পাশাপাশি ইহজাগতিক কল্যাণ ও শান্তি এবং পরকালীন মুক্তির জন্য চাই এমন একটি শিক্ষা ব্যবস্থা, যা হবে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, ধর্ম ও নৈতিকতার সমন্বয়ে গঠিত এবং সুচিন্তিত বিশ্বমানের শিক্ষা কারিকুলাম অনুযায়ী পরিচালিত । কিন্তু দুঃখজনক বর্তমানে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় সাধারণ শিক্ষা এবং মাদ্রাসা শিক্ষা এ দু’ ধারার কোনটিতেই পরিপুর্ণ সমন্বয় না থাকায়, একজন তৈরি হচ্ছেন অনেকটা বেপরোয়াভাবে শুধু দুনিয়ার কথা চিন্তা করে আর অপরজন হচ্ছেন বর্তমান বিশ্ব ব্যবস্থাকে খানিকটা পাশ কাটিয়ে । ফলে সমাজ ব্যবস্থায় একই রক্ত মাংসে গড়া দু’জন বনি আদমকে দেখা যায় দুটি ভিন্ন চেহারায়।
�� মাদ্রাসা শিক্ষার শিক্ষিত সর্বোচ্চ ডিগ্রীধারী ও দুনিয়া সম্পর্কে অজ্ঞ, নেতৃত্বের অযোগ্য হিসেবে গণ্য করা হয়। অপর দিকে সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তিকে মনে হয় ধর্মজ্ঞানহীন,আল্লাহ, রাসূল,ও পরকাল বিমুখ দুনিয়াদার হিসেবে। অথচ হযরত মুহাম্মদ স. এর কাছে আর্দশিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে, একটি বর্বর জাতি বিশ্বের সর্ব শ্রেষ্ঠ জাতিতে পরিণত হয়েছিল। তৈরি হয়েছিল হযরত আবু বকর, উমর, উসমান, আলী রা. প্রমুখের মত মহামনীষী, যারা ছিলেন পরহেযগার, মুত্তাকী সেনাপতী,বিচারপতি,সমর নায়ক, রাষ্ট্রনায়ক। কুরআন সুন্নাহভিত্তিক ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা থেকেই তৈরি হয়েছিলেন অংক শাস্ত্রের বিস্ময় আল খাওয়ারেজমী, চিকিৎসা বিজ্ঞানী ইবনে সিনা, দার্শনিক ইমাম গাজ্জালী, ঐতিহাসিক ইবনে খালদুন, হাকিমুল উম্মাহ হযরত মাও. আশরাফ আলী থানভী রহ. সহ অসংখ্য জ্ঞানী, বিজ্ঞানী ও জ্ঞানতাপস। আজ যে শিশুটি জন্মগ্রহণ করছে আগামীতে সে-ই হবে দেশ ও জাতীর অভিভাবক ও কর্ণধার। কাজেই তাকে উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে হবে। একবিংশ শতাব্দীতে আধুনিক জ্ঞান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সাথে প্রতিযোগিতায় যেন তারা টিকে থাকতে পারে তা নিয়ে এখনই আমাদের ভাবতে হবে। শুধু মাত্র জাগতিক শিক্ষার মাধ্যমে এ লক্ষ্যে পৌঁছা সম্ভব নয়। একটি শিশুকে সুনাগরিক, সুশিক্ষিত, অনুপম চরিত্র সম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হলে দুনিয়াবী ও দ্বীনি শিক্ষা অত্যন্ত জরুরী।
�� কুরআনুল কারিমে “ইকরা” [পড়া, বুঝা, মানা] এ আশা সামনে রেখেই ২০১৩ সালে ঢাকা শহরের পূর্বরামপুরায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ঢাকা শহরের প্রাণকেন্দ্রে পূর্ব রামপুরা পুরাতন পুলিশ ফাড়িঁ ‘দারুল ইকরা মাদরাসা’ দ্বীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দারুল ইকরা মাদরাসা মূলত একটি ক্যাডেট আবাসিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আমাদের সকল মেধা ও শ্রমের বিনিময়ে আপনার সন্তানকে আধুনিক শিক্ষার সাথে সমন্বয় রেখে, আউলিয়া কেরামের অনুসৃত পথে কুরআন ও সুন্নাহর আদর্শ অনুসরনের মাধ্যমে আল্লাহ ভীরু সৎ ও দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলে ইহকালীন পরকালীন সফলতা অর্জনই দারুল ইক্রা মাদ্রাসার উদ্দেশ্য। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন ‘আমিন’।